অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মামলা: এবার শুনানিতে ইউনিলিভারসহ ৭ কোম্পানি-ব্যবসায়ী

অস্বাভাবিকভাবে মূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগের নয় মামলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশসহ সাত কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার শুনানির দিন রেখেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

এর মধ্যে সাবান, সুগন্ধি সাবান ও গুঁড়া সাবানের মতো টয়লেট্রিজ পণ্যের বিষয়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে।

কোম্পানিটির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স শামীমা আকতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিযোগিতা কমিশনে শুনানির জন্য চিঠি তারা পেয়েছেন। ওই চিঠির বিষয়ে মঙ্গলবার যথাযথ নিয়ম মেনে ইউনিলিভারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল শুনানিতে অংশ নেবে।”

কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এদিন শুনানিতে চালের জন্য রশিদ এগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ, নওগাঁর বেলকন গ্রুপের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডাকা হয়েছে।

সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একই দিন আটা-ময়দার জন্যও শুনানিতে অংশ নিতে হবে।

আর ডিমের জন্য প্যারাগন পোল্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ এবং মুরগির জন্য প্যারাগন পোল্ট্রি লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শুনানিতে ডাকা হয়েছে।

প্রতিযোগিতা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নোটিসে বলা হয়, বর্তমান দেশের বাজারে চাল, আটা-ময়দা, ডিম, বয়লার মুরগী, টয়লেট্রিজ (সাবান, সুগন্ধি সাবান, গুঁড়া সাবান) ইত্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকটের ফলে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা দূরীকরণে এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছে, যার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার।

এর আগে সোমবার শুনানির প্রথম দিন ডিম ও মুরগির জন্য দুই মামলায় কাজী ফার্মসের প্রতিনিধি অংশ নেন।

পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে বাজার ‘অস্থিতিশীল’ করার অভিযোগে নিত্যপণ্য প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার ৪৪টি মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন।

প্রতিযোগিতা কমিশন আইনে কমিশনেই চাল, তেল, সাবান, আটা, ডিম ও মুরগি উৎপাদন ও সরবরাহ খাতের এসব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে দাম বাড়ানোসহ আরও কিছু অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় পৃথকভাবে এসব মামলা করা হয়।

পর্যায়ক্রমে এসব মামলার শুনানি হবে কমিশনে, যা শুরু হয় কাজী ফার্মসকে দিয়ে। 

তালিকায় আরও যারা

প্রতিযোগিতা কমিশন বৃহস্পতিবার যেসব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা করেছিল, সেটির তালিকা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব কোম্পানি ও ব্যক্তিকে মামলার বিষয়ে শুনানি করা হবে। সোম ও মঙ্গলবার প্রথম দুই দিনের শুনানির জন্য ডাকা হলো ৮ কোম্পানি ও ব্যবসায়ীকে।

মামলা হলেও যেসব কোম্পানির শুনানির দিন ঠিক হয়নি, সেগুলো হল- চালের ব্যবসায় যুক্ত স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চেয়ারম্যান, এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্র্যাক সিড অ্যান্ড এগ্রোর চেয়ারম্যান অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রাণ ফুডের সিইও অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দিনাজপুরের জহুরা অটো রাইস মিলের মো. আব্দুল হান্নান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এরফান গ্রুপের মো. এরফান আলী, বগুড়ার কিবরিয়া এগ্রোর গোলাম কিবরিয়া বাহার, নওগাঁর মফিজ অটোমেটিক রাইস মিলের তৌফিকুল ইসলাম বাবু, বগুড়ার আলাল এগ্রোর আলাল আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নূরজাহান এগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী জহিরুল ইসলাম, বগুড়ার খান অটো রাইস মিলের পুটু মিয়া, কুষ্টিয়ার দাদা রাইস মিলের আরশাদ আলী, নওগাঁর মজুমদার অটো রাইস মিলের ব্রজেন মজুমদার, নারায়ণগঞ্জের সিটি অটোরাইস অ্যান্ড ডাল মিল, ম্যাবকো হাইটেক রাইসের চেয়ারম্যান অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আটা-ময়দার বিপণনে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য মেঘনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আকিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসিআই, টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নূরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এস আলম রিফাইন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে মামলা করা হয়েছে।

ডিমের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সিপি বাংলাদেশের সিইও, ডায়মন্ড এগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পিপলস ফিডের প্রোপাইটরের নামে মামলা করা হয়েছে।

মুরগির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সাগুনা ফুড অ্যান্ড ফিডের পরিচালক, আলার পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিডের এমডি, নারিশ পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির পরিচালক, সিপি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের নামে মামলা করা হয়েছে।

টয়লেট্রিজ বা সাবান, সুগন্ধি সাবান, গুড়া সাবানের বিপণনে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোহিনূর কেমিক্যাল ও কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান কিংবা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে মামলা করা হয়েছে।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ইউক্রেইন রাশিয়া যুদ্ধ ও ডলারের দাম বাড়াসহ বিভিন্ন কারণে দেশের বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিয়ষটি মনিটরিং করতে শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ভোক্তা অধিকারের সঙ্গে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও পাইকারি বিক্রেতাদের দফায় দফায় বৈঠক শেষে সরকারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এসব মামলা করে।

আইন অনুযায়ী, প্রতিযোগিতা কমিশনে কোনো কোম্পানির অপরাধ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভারের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করার সুযোগ রয়েছে।

কাজী ফার্মসের ডিম ‘নিলাম’ পদ্ধতি দেখে প্রতিযোগিতা কমিশনের ‘বিস্ময়’


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *